ধানমন্ডি লেক, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাছ শিকার করেছি অনেকবার। কিন্তু সাগরে মাছ শিকার করার ইচ্ছে পূরণ হলো কিছুদিন আগে। সদ্য ধরা তাজা মাছ সমুদ্রের মাঝে রান্না করে খাওয়ার আনন্দ এতো বেশি ছিলো যা লিখে বুঝানো সম্ভব না। তাছাড়া মাছ ধরার পাশাপাশি অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখা কয়জনের ভাগ্যে জুটে!
নীরবতার মাঝে ঢেউ এর ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, নৌকার এক পাশে গাঢ় নীল পানিতে সোনালি ঢেউ। এই দৃশ্যগুলো যেন মুগ্ধতাকেও ছাড়িয়ে যায়! শেষ বিকেলে সূর্যাস্তের অপর পাশে চাঁদের আলোয় রুপালি ঢেউ দেখতে পাবেন, যদি আপনিও সমুদ্রে মাছ শিকারে বের হন। সূর্যের শেষ আলোটা মাঝ সমুদ্র থেকে দেখার অনুভূতি ছবিতে বা কথায় প্রকাশ করার নয়। আর সাঁতার জানা থাকলে কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানিতে গা ভিজিয়ে আসতে পারেন। ফেরত আসার সময় দেখবেন ঘুট-ঘুটে অন্ধকারে চাঁদের আলো ফ্লাড লাইটের মতো চোখে লাগছে। কি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য!
যারা শখ করে টিকেট কেটে পুকুরে বা লেকে মাছ ধরেন অথবা কখনোই মাছ ধরেননি তারাও যেতে পারেন গভীর সমুদ্রে। পুকুর-নদীতে আর সমুদ্রে মাছ ধরার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। কারণ, পুকুর বা লেকে মাছ টোপ খেয়ে টানতে থাকে অথবা ঠোকর দিলে সুতোয় টান লাগে। এর থেকে বোঝা যায় মাছে বড়শি গেঁথেছে। কিন্তু সমুদ্রের মাছ টোপ খেয়ে চুপ-চাপ সেখানেই বসে থাকে! আর ঢেউ-এর কারণে মাছ টোপ খাচ্ছে কিনা সহজে বোঝা যায়না। তাই সমুদ্রে মাছ ধরাটা একটু কঠিন। আয়ত্ত করতে একটু সময় লাগে।
আমরা ঢাকা থেক ছিপ-বড়শি নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছিপ নিয়ে বসলে মাছ খাচ্ছে কি-না, একেবারেই বোঝা যায়না। সেন্টমার্টিনের মানুষ ছিপ ছাড়া শুধু সুতা দিয়ে পানিতে টোপ ঝুলিয়ে রেখে বসে থাকে। এতে মাছ ধরা পড়লো কি-না সহজে বোঝা যায়! পাড় থেকে অথবা জেটিতে বসেও মাছ ধরতে পারবেন। টোপ হিসাবে প্রয়োজন চাপিলা মাছ। ৫-৬ জনের মাছ ধরার জন্য বাজার থেকে ১০০ টাকার মাছ যথেষ্ট।
সেন্টমার্টিন অথবা কক্সবাজার, দুই জায়গা থেকেই মাছ ধরতে যেতে পারবেন। প্রতিদিন বিকেল ৪টার পর অনেক নৌকা মাছ ধরার উদ্দেশে সমুদ্রের দিকে রওনা দেয়। যেকোনো একটির সাথে কথা বলে তাদের সঙ্গে যেতে পারেন। তবে নিরাপত্তার জন্য আগের পরিচিত বা নিজেদের হোটেল থেকে কথা বলে নৌকা ঠিক করে নিতে পারেন। জেলেদের নৌকায় না উঠলে ভুল করবেন, কারণ অন্য নৌকা ঢেউয়ের কবলে বেশি পড়ে।
আমরা নৌকা ভাড়া করেছিলাম খুব অল্প টাকায়। বিকাল ৪ টায় রওনা দিয়ে ফেরত এসছিলাম রাত ১০ টায়, এভাবে দুই দিন। প্রতিদিন চুক্তি অনুযায়ি ৬০০টাকা দিতে হয়েছে তাদের। বেশি দুরে যেতে না চাইলে দ্বীপের কাছাকাছি গিয়েও মাছ ধরতে পারবেন। তবে মাছ বেশি পাবেন দূরে গেলে। আপনার খুব বেশি সাহস থাকলে সারা রাত মাছ ধরতে পারেন। রাতেও মাঝিরা জাল দিয়ে মাছ ধরতে যায়। আপনারা যদি নৌকাতেই রান্না করে খেতে চান তাহলে আগে থেকে মাঝিদের সাথে আলাপ করে নিতে হবে। সাধারণত ওদের নৌকাতেই চুলা থাকে, তারাই আপনাকে রান্না করে খাওয়াবে। যাবার আগে অবশ্যই শুকনো খাবার,পানি সাথে নিয়ে যেতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে লাইফ জ্যাকেটও নিয়ে যেতে পারেন।
আপনি সমুদ্রে কোরাল, টুনা, চাঁদা, পোয়া, ভেটকি আর গ্রুপার মাছ খুব সহজেই ধরতে পারবেন। তবে কোরাল আর ভেটকি মাছ বেশি ধরা পড়ে।
পাঠকের মতামত